আঠারো বছর বয়স অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : সুকান্ত ভট্টাচার্যের “আঠারো বছর বয়স” কবিতাটি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। এ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসে জীবনের ঝুঁকি নেবার উপযোগী।
এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপত্তিকে পেরিয়ে যাওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজ জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে এ বয়স হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর।
আঠারো বছর বয়স অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য কেন আঠারো বছর বয়সকে নির্ধারণ করেছেন?
উত্তর : কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সকে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
আঠারো বছর বয়স হচ্ছে কৈশোর থেকে তারুণ্যে পদার্পণের উপযুক্ত সময়। এই বয়সেই মানুষ নিজেকে বুঝতে শেখে, শাণিত করে তোলে নিজের অভিজ্ঞতাকে। এ বিষয়টি যেমন প্রবল উত্তেজনার, আবেগ ও উচ্ছ্বাসে ভরপুর, তেমনি এ সময়টি দুঃসাহসিক ঝুঁকি নেবার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত বয়স।
তাই এই বয়সের অদম্য সাহসী তরুণ যখন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে, তখন দ্রুতগতিতে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। পুরনো ও জরাজীর্ণতাকে ভেঙে ফেলে একটি নতুন সমাজ, একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে তাই আঠারো বছর বয়সী তরুণের বিকল্প নেই। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য উল্লিখিত বিষয় বিবেচনা করেই আঠারো বছর বয়সকে কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
২. কোন বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন বয়স বলা হয় এবং কেন?
উত্তর : ‘আঠারো বছর বয়স’ হচ্ছে কৈশোর থেকে যৌবনে রূপান্তরিত হওয়ার সময়। তাই আঠারো বছর বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়। শৈশব ও কৈশোরের ছেলেখেলা ভুলে মানুষ ক্রমান্বয়ে পরিণত হতে থাকে। ‘আঠারো বছর বয়স’ হচ্ছে মানুষের যৌবনে পদার্পণের সময়। এই সময়ে মানুষের দৈহিক ও মানসিক গঠনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষের মনোজাগতিক পৃথিবীতে এক ধরনের নীরব বিপ্ল¬ব সাধিত হয়।
মানুষ হয়ে ওঠে সাহসী, আবেগী ও প্রবল উত্তেজনাসম্পন্ন। আর এই পুরো পরিবর্তনটির সূত্রপাত হয় আঠারো বছর বয়সে। এ সময়ে মানুষ ক্রমান্বয়ে অভিজ্ঞ ও মেধাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। শৈশব কৈশোরের কাঁচা-মন এই বয়সে এসে আবেগ ও সাহসে ভরপুর হয়ে ওঠে। ফলে এই সময়কে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়।
৩. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’-কারা? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো’ চলে তরুণেরা। তরুণেরা হচ্ছে দুর্বার গতির প্রতীক। তারা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। দুঃসাহসিক প্রত্যয়ে জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একমাত্র তারুণ্যের পক্ষেই সম্ভব বিজয় ছিনিয়ে আনা। তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের দুর্বার গতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে বাষ্পের বেগ ও স্টিমার শব্দগুলোর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। তার মতে, তরুণরা যেন স্টিমারের গতিবেগের মতোই বাতাসের বেগে ছুটে চলে। জীবন ও জগতের কল্যাণ ও অকল্যাণকর উভয় ক্ষেত্রেই তরুণেরা তার এই গতিকে কাজে লাগাতে পারে। তবে কবির মতে, তরুণেরা এই গতিশক্তিকে শুধু কল্যাণকর কাজেই প্রয়োগ করবে।
৪. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর : কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ হওয়া উচিত কল্যাণকর ও দেশসেবামূলক কাজে। তারুণ্য এক অসীম এবং দুর্নিবার প্রাণশক্তির প্রতীক। তরুণেরা তার এই প্রাণশক্তিকে যেমন ধ্বংসাত্মক কাজে লাগাতে পারে তেমনি কল্যাণকর কাজেও লাগাতে পারে। দুর্বার গতিসম্পন্ন দুঃসাহসিক তরুণ ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুই ক্ষেত্রেই তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।
কিন্তু কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতে, তরুণেরা কেবল দেশসেবামূলক ও কল্যাণকর কাজের ক্ষেত্রেই আত্মত্যাগ করবে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি এই শুভবোধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়েই তরুণেরা তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। তাই তারুণ্যের আত্মত্যাগ হবে কেবল শুভ ও সুন্দর কাজে।
৫. কীভাবে আঠারো বছর বয়স জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে?
উত্তর : ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই ‘আঠারো বছর বয়স’ জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে। হাজারো ইতিবাচক গুণের সমষ্টি হয়ে ‘আঠারো বছর বয়স’ এক বিশাল শক্তির প্রতীক হয়ে মানবজীবনের চলার পথে ভূমিকা রাখে। জড়, নিশ্চল, ব্যর্থ, জীর্ণ, পুরনো ও প্রথাবদ্ধ জীবনকে পায়ে ঠেলে নতুন জীবনের পথে এগিয়ে চলে ‘আঠারো বছর বয়স’।
নতুন স্বপ্নে উদ্দীপিত হয়ে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়ে আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তাদের উদ্দীপনা, সাহসিকতা ও চলার দুর্বার গতিকে যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগ করতে পারে। আর এভাবেই সে হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি। ‘আঠারো বছর বয়স’-এর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই জাতীয় জীবনকে সচল করে তোলা সম্ভব।
৬. কবি আঠারো বছর বয়সকে ‘দুঃসহ’ বলেছেন কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন। এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। এদিক থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়।
৭. “এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে”-উক্তিটি দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : “এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে” বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন দুর্বার তারুণ্যের বয়স আঠারোর বৈশিষ্ট্যগুলোকে যেগুলো আমাদের জীবন চলার পথে চালিকাশক্তিরূপে কাজ করে। আঠারো বছর বয়স বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। এ বয়সের মানুষ নিথর-নিশ্চল জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্নে অগ্রগামী হয় । সাহসিকতা, উদ্দীপনা, কল্যাণ ও সেবাব্রতে ঝাঁপিয়ে পড়া এ বয়সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, বৈষম্য ও ভেদাভেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এ বয়স। দেশ ও জনগণের মুক্তি সাধিত হতে পারে তারুণ্যদীপ্ত এ প্রজন্মের হাত ধরেই। তাই কবি বলতে চেয়েছেন, এদেশেরও যেন আঠারো বছর বয়স ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
৮. দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবেলায় কবি তারুণ্যের কী কী বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন? লেখ।
উত্তর : দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবেলায় কবি তারুণ্যের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত- এসব বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। আঠারো বছর বয়সেই জাগ্রত হয় সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবেলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। তারা যৌবনশক্তি নিয়ে দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত- এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি আশা করেছেন চারপাশের যাবতীয় অসংগতি দূর করে যৌবনের শক্তি দেশের চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
৯. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলো’ – একথা দিয়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’- এ কথা দিয়ে আঠারো বছর বয়সের দুর্বার গতিশীলতাকেই কবি বোঝাতে চেয়েছেন। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে আঠার বছর বয়সের যৌবনপ্রাপ্ত তরুণরাই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। কেননা, তাদের গতি দুর্বার, তারা লক্ষ্যে অবিচল, প্রতিজ্ঞায় অটল।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটুও দ্বিধা করে না বিপদ মোকাবেলায়। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য বাষ্পের গতি নিয়ে স্টিমারের মতো এ বয়সীরা এগিয়ে যায়। জীবন উৎসর্গ করে হলেও তারা লক্ষে পৌঁছাতে সচেষ্ট হয়। দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সেই বৈশিষ্ট্য।
১০. “আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ” -কেন?
উত্তর : আঠারো বছর বয়স জীবনের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। এ সময় আসে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি ও নানা ধরনের ঝুঁকি। তাই কবি এ বয়সকে দুঃসহ বলেছেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় মানবজীবনের আঠারো বছর বয়সটিকে দুঃসহ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এই বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে এই বয়সেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তরুণকে।
আত্মনির্ভরশীলতার তাড়না তাকে এ সময় অস্থির করে তোলে। স্পর্ধিত সাহসে এই বয়সেই স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঝুঁকি নেয় সে । এদিক থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। জীবনকে আর আগের মতো ধরাবাধা ছকে বেঁধে রাখা যায় না। বরং উন্মাতাল আবেগে সবকিছু ছাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তাই বলা হয়েছে ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ’।
১১. ‘রক্তদানের পুণ্য’ কথাটির অর্থ লিখ।
উত্তর : ‘রক্তদানের পুণ্য’ কথাটির অর্থ হলো মানুষ ও সমাজের কল্যাণে জীবনদান। রক্তদান একটি মহাপুণ্যের কাজ। আঠারো বছর বয়স রক্ত দিয়ে পুণ্য আনতে জানে। অন্যের কল্যাণে যে নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে, সেই প্রকৃত মানুষ। তরুণ বয়সে এটা সম্ভব হয়। এ বয়সে তরুণরা মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করে। জীবনের সার্থকতা খুঁজে নেয় অন্যের উপকার সাধনের মাঝে।
১২. আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর কেন?
উত্তর : আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর, কেননা এ বয়সে সঠিক নির্দেশনা না পেলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আঠারোর মূলশক্তি হচ্ছে তার গতি, স্পর্ধা এবং ঝুঁকি নেবার মানসিকতা। কিন্তু এ ঝুঁকি যদি অবিবেচনাপ্রসূত হয়, তাহলে তা জীবনের জন্য কল্যাণকর ও সৃষ্টিশীল না হয়ে বরং অকল্যাণকর ও ধ্বংসাত্মক হয়। এ যেন তলোয়ারের ধার ধরে হাঁটার মতো বিষয়। এ কারণেই আঠারো বছর বয়সকে ভয়ংকর বলা হয়েছে।
১৩. ‘আঠারো বছর বয়স’ বলতে কী শুধু বয়সকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আঠারো বছর বলতে কেবল বয়সকেই বুঝানো হয়নি। বরং এই বয়সের চেতনা পুরো বয়সে প্রতিফলিত করে সফলতা লাভের প্রয়াসকে বোঝায়। না, আঠারো বছর বয়স বলতে এ কবিতায় শুধু বয়সকেই বুঝানো হয়নি। বরং একটি চেতনাকে বুঝানো হয়েছে। আঠারোর চেতনা আটাশিতেও মানুষ ধারণ করতে পারে যদি সে মুক্ত চেতনার মানুষ হয়। তাই কবিতায় ‘আঠারো বছর বয়স’ বলতে তারুণ্যকে নির্দেশ করা হয়েছে। এই তারুণ্য বয়সের ফ্রেমে সীমাবদ্ধ নয়।
১৪. কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন কেন?
উত্তর : আঠারো বছর বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। এ সময় তাকে নানা বাধা ও ঝুঁকি অতিক্রম করতে হয়। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন। তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর অসাধারণ কবিতা ‘আঠারো বছর বয়স’ -এ তরুণদের আঠারো বছর বয়সটিকে দুঃসহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা, আঠারো বছর বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন সময়। এ সময়টি হলো কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের সিঁড়ি।
কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সেই তাকে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে এ বয়সেই উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। এদিক থেকে তাকে এক কঠিন দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।
১৫. “এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়” -কথাটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। তরুণরা কখনো ভীরু বা কাপুরুষ হয় না। উত্তেজনার প্রবল ও দুরন্ত চঞ্চলতায় এ জীবন থাকে উজ্জ্বল। তারা কোনো বাধা বিপত্তিকেই ভয় পায় না। কবি সে কথা বোঝাতেই বলেছেন আঠারো বছর বয়স ভীরু, কাপুরুষ নয়।‘আঠারো বছর বয়স’ ভীরু ও কাপুরুষ নয়। কারণ আঠারো বছর বয়সে মানুষ কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে প্রবেশ করে এবং এ সময় আত্মবলে বলিয়ান হয়ে ওঠে।
তখন সে কোনো বাধাই মানতে চায় না। অজানাকে জানার জন্য সে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত থাকে এবং সব বাধা বিপত্তিকে দুমড়ে-মুচড়ে ছুটন্ত ঘোড়ার মতো চলে সম্মুখপানে। সমাজের শোষণ ও নির্যাতন দেখে সে কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থাকে না। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে ‘ভীরু ও কাপুরুষ নয়’ বলেছেন।
১৬. আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয় কেন?
উত্তর : আঠারো বছর বয়সে তরুণেরা ঝুঁকি নেয় স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচার। তাই আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয়। আঠারোর উদ্দামতায় ঋদ্ধ যুবকরা কখনো মাথা নত করে না। কারণ, এ বয়সে সে হয়ে ওঠে আত্মপ্রত্যয়ী। সে পথ চলে দুর্বার গতিতে। তাঁরা জড়-নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখে। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমস্ত বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে। সংকটকে উপড়ে ফেলে, সমস্যার পাহাড়কে তুচ্ছ ভেবে তরুণরা পা বাড়ায় সামনে। উদ্ধত ও দুর্বিনীত সত্যে তাঁরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। তাই আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয়।
১৭. “পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে” -লাইনটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়“পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে” -লাইনটি দিয়ে কবি মূলত অসীম দুঃসাহসের সাথে তরুণের পথ চলাকে নির্দেশ করেছেন। এ বয়সে তারা সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এগিয়ে চলে সামনের দিকে।
আঠারো বছর বয়স চলার পথে থেমে যায় না, দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা ও জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য। এ বয়স দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে অফুরন্ত প্রাণ শক্তির অধিকারী। তাই শত বাধা, বিপত্তি তাদের চলার পথকে রুদ্ধ করতে পারে না।