তাহারেই পড়ে মনে অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : প্রিয়জন হারানোর বিষাদঘন বেদনা মানুষকে তিলে তিলে কষ্ট দেয়। কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় তাঁর ব্যক্তিজীবনের এক মর্মান্তিক বেদনার স্মৃতিকেই তুলে ধরেছেন। প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষকে ক্রমান্বয়ে বিষন্ন ও উদাস করে তোলে।
কবি ও কবি-ভক্তের সংলাপে কবির নিরাসক্ত উদাস ভাবটি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবি শীতের রিক্ততা ভুলতে পারেন নি। কারণ তাঁর মনোজগতে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা গভীর হয়ে বার বার উঁকি দিচ্ছে। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর বেদনা তাই কবিকে করে তুলেছে জীবনবিমুখ, নিরাসক্ত এক বিষন্ন মানুষ।
তাহারেই পড়ে মনে অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির যে বিষাদঘন একাকিত্বের বিষয়টি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটিতে মানবমনের বেদনামথিত শোকের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে। প্রিয়জন হারিয়ে একাকী জীবনযাপন করতে থাকা কবি এতটাই উদাসীন হয়ে পড়েন যে, প্রকৃতিতে শীত চলে গিয়ে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবি টের পান না। কবি-ভক্তরা তাঁকে বসন্ত বন্দনামূলক গান রচনা করতে অনুরোধ করলেও সাড়া দেন না কবি। কারণ কবির মনে যে বিষাদময় স্মৃতি বার বার ফিরে আসে, তা কিছুতেই ভুলতে পারেন না কবি। কবির এই বিষাদময়তা ও একাকিত্বের প্রভাব তাঁর কাব্য সৃষ্টিতেও পড়েছে।
২. “অলখের পাথার বাহিয়া”- চিত্রকল্পটির মর্মার্থ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সুদূরতম ইঙ্গিত প্রদান করার লক্ষ্যে কবি “অলখের পাথার বাহিয়া” চিত্রকল্পের অবতারণা করেছেন। “অলখের পাথার বাহিয়া”-বাক্যটির আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় দৃষ্টিসীমার বাইরে সমুদ্রপথে ছুটে চলা কোনো কিছু। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় স্মৃতিভারাক্রান্ত কবির মনে বসন্তের আগমনের দৃশ্যটির দূরত্ব বুঝাতে এই চিত্রকল্পটি ব্যবহৃত হয়েছে। কবির হৃদয়ে যেন বসন্তের আগমনের মতোই সুদূর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে কোনো এক সুখকর স্মৃতি দুয়ারে এসে হানা দেয়। এখানে প্রিয়-মানুষটির চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টির প্রতিও ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
৩. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ঋতুকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। শীত ঋতুতে চারদিকে নিঃস্বতা ও রিক্ততার যে ছবি দেখা যায় তাতে প্রকৃতিকে সন্ন্যাসীর মতো অলংকারহীন মনে হয়। কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীতের রিক্ত ও জরাজীর্ণতাকে বোঝাতে শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসী বলে উল্লেখ করেছেন। শীত ঋতুতে চারদিকে পাতাবিহীন গাছের যে প্রাকৃতিক নান্দনিকতা তৈরি হয়, তা দৃশ্যত সন্ন্যাসীর মতোই মনে হয়।
৪. প্রিয়জন হারানোর বেদনা কীভাবে মানুষের মনে ছায়াপাত করে?- ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাবলম্বনে তা বর্ণনা করো।
উত্তর : প্রিয়জন হারানোর বিষাদঘন বেদনা মানুষকে তিলে তিলে কষ্ট দেয়। কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় তাঁর ব্যক্তিজীবনের এক মর্মান্তিক বেদনার স্মৃতিকেই তুলে ধরেছেন। প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষকে ক্রমান্বয়ে বিষন্ন ও উদাস করে তোলে। কবি ও কবি-ভক্তের সংলাপে কবির নিরাসক্ত উদাস ভাবটি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবি শীতের রিক্ততা ভুলতে পারেন নি। কারণ তাঁর মনোজগতে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা গভীর হয়ে বার বার উঁকি দিচ্ছে। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর বেদনা তাই কবিকে করে তুলেছে জীবনবিমুখ, নিরাসক্ত এক বিষন্ন মানুষ।
৫. “হে কবি নীরব কেন?” -কবি কোন কারণে নীরব?
উত্তর : প্রিয়জন হারানোর বিষাদময় স্মৃতি ভুলতে না পেরে নিঃস্ব কবিকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবির মনোজগৎ জুড়ে বিরাজ করছে শীতের রিক্ততা ও বিষন্নতার ছবি। কবির মন দুঃখ-ভারাক্রান্ত। শীতের করুণ বিদায় কবির মনে যে বেদনার ছায়াপাত রেখে গেছে, তা কবি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এখানে প্রকৃতি ও মানব মনের মিলের দিকটি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। কবির নীরবতার কারণটি যেন প্রকৃতির চিরাচরিত পরস্থিতির মাঝেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। মূলত প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কাতর কবি স্বাভাবিকভাবেই নিঃস্ব, রিক্ত এবং নীরব হয়ে পড়েন।
৬. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি নাটকীয় গুণসম্পন্ন। সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কবিতার মধ্যে যখন নাটকীয় গুণ থাকে তখন তাকে নাটকীয় গুণসম্পন্ন কবিতা বলে। নাটকীয় কবিতার মধ্যে একাধিক চরিত্র বা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে ভাব ফুটে ওঠে। বেগম সুফিয়া কামালের ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় নাটকীয়তার ভাব সুস্পষ্ট। গঠনরীতির দিক থেকে এটি একটি সংলাপধর্মী কবিতা। কবিতাটি নির্মিত হয়েছে কবি ও কবিভক্তের মধ্যে নাটকীয় সংলাপের ভিত্তিতে।
এভাবে কবিতার সবকটি চরণ দ্বৈত ছন্দোবদ্ধ কথোপকথনের রীতিতে রচিত হয়েছে। কবিতায় এ ধরনের নাটকীয়তা খুব কমই লক্ষ করা যায়। কবি সুফিয়া কামাল এ নাটকীয়তা সৃষ্টির মাধ্যমে কবিতাটিকে ভিন্নমাত্রায় ভূষিত করেছেন। কবিতায় নাটকীয় সংলাপের ভাব থাকায় একে নাটকীয় গুণসম্পন্ন কবিতা বলা যায়।
৭. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্তের আগমনে কবি উদাসীন কেন?
উত্তর : বসন্তের নয়নলোভা সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও কবিমনে আজ তীব্র উদাসীনতা, আচরণে অনাকাক্সিক্ষত বিষন্নতা। কেননা বসন্তের আগমনের কিছুকাল পূর্বেই যাবতীয় রিক্ততা, শূন্যতা আর নিঃস্বতা নিয়ে শীত ঋতু হারিয়ে গেছে পুষ্পশূন্য দিগন্তে। শীতের প্রকোপে বৃক্ষলতা হয়েছে পত্রহীন, পুষ্পীন, পাণ্ডু এবং শ্রীহীন। এর আগমন ও বিদায়ে প্রকৃতি থেকেছে নীরব। শীতের এই উদার্য কবির কাছে শীতকে মহিমান্বিত করেছে। তাই কবি শীতকে ভুলতে পারেন নি।
শীতের রিক্ত ও নিঃস্বভাব কবিচিত্তে যে বেদনার সঞ্চার করেছে তার আবেগেই তিনি নির্মোহ এবং নিশ্চল। একটি চরম দুঃখবোধ বা কিছু হারানোর বিলাপ কবির মানসে পূর্ণ আসন দখল করেছে। তাই কখন চুপিসারে তাঁর দ্বারে বসন্তের আগমন ঘটেছে তা তিনি লক্ষ্য করেন নি। তিনি উদাসীনভাবে বসন্তকে উপেক্ষা করেছেন। ফলে বসন্তের আগমনকে তিনি স্বাগত জানাতে পারেন নি।
৮. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও কবির মনের অবস্থার মধ্যে কোনটি প্রধান হয়ে উঠেছে বলে তুমি মনে কর? কেন?
উত্তর : এ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি লাভ করেছে। কবিতার বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলে আপাতদৃষ্টিতে তাকে প্রকৃতি বিষয়ক কবিতা বলেই মনে হয়। নিঃস্বর্গ অর্থাৎ প্রকৃতি বিষয়ক কবিতার সমস্ত বৈশিষ্ট্য এতে রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির মধুর রূপরাশির বর্ণনা করাই কবির একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বসন্তের আবেদন তার হৃদয় দুয়ারে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কবির মন দুঃখভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার অর্থহীন মনে কোন আবেদন জানাতে পারছে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য তার প্রথম স্বামী ও কাব্য সাধনার প্রেরণা পুরুষের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে যে বিষণœতা জাগে তারই সুস্পৃষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় ফুটে উঠেছে। ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে ফুলে ফুলে সাজানো, সৌরভমুখর মাদকতাময় প্রকৃতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কিন্তু বসন্তের নয়নলোভা সৌন্দর্য কবিকে মুগ্ধ করতে পারে নি। কেননা কবি শীতের রিক্ততার জন্য বেদনাহত। শীতের প্রভাব তার হৃদয় থেকে মুছে যায় নি। তিনি উদাসীনভাবে বসন্তকে উপেক্ষা করছেন।
৯. “তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।” – পঙ্ক্তি দুটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : কবি অকাল বৈধব্যের শিকার। তাঁর হৃদয় দুঃখে-শোকে মুহ্যমান। কবির সে শোকদগ্ধ মনে ঋতুরাজ বসন্তের অপরূপ সমারোহে আগমন কোনো আনন্দের বাণী নিয়ে আসে নি। কবি এতই আনমনা যে, তিনি খেয়ালই করেন নি প্রকৃতিতে কখন ঋতুরাজের আগমন ঘটেছে। কবির চেতনা আজ বিমূঢ়। ফুলের সুবাস ও পাখির কলরব তাঁর চিত্তে পুলক শিহরণ জাগায় নি। তাঁর বিরহকাতর ব্যথাদীর্ণ হৃদয়ের অনন্ত হাহাকারের জন্যই কবি এসবের সন্ধান রাখেন না।
কবি এত ফুলের সৌরভ, দখিনা সমীকরণ দেখে এতটুকুও আবেগকম্পিত হন নি। অন্তরে তাঁর কোনো শিহরণ জাগে নি। তিনি মৌন, তিনি উদাসীন হয়ে আছে। কবির অনুরাগী জনৈক ভক্তের বসন্তকে বরণ করে নেয়ার মিনতি জানানোর পর কবি জানতে চাইলেন দিগন্তের পথ বেয়ে সৌন্দর্যের পসরা বোঝাই তরীখানি এসেছে কি না। বসন্তের কোনো আগমনী বাণী তিনি শুনতে পান নি। কেননা কবির মন শীতের ঋতুতেই আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
১০. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা অবলম্বনে সংক্ষেপে বসন্ত ঋতুর বর্ণনা দাও।
উত্তর : সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানব মনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। সেই অফুরন্ত আনন্দের উৎস হিসেবে পৃথিবীতে বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে। প্রকৃতিতে ঘটে গেছে এক অনিন্দ-হিন্দোল। দখিন দুয়ার খুলে গেছে। বাগানে ফুটেছে বাতাবি লেবুর ফুল। ফুটেছে আমের মুকুল। দখিনা সমীর গন্ধে গন্ধে অধীর-আকুল হয়েছে। নতুন ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়েছে তার পূর্ণ রূপ মাধুর্য দিয়ে। মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ ছড়িয়েছে। দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে।
সঙ্গে এনেছে পৃথিবীর সমস্ত সৌরভ। আমের মুকুলে মৌমাছির গুঞ্জরণ, মাধবী ফুলের কুঁড়ির নাচন আর বনে বনে ফুলের আসরে নানা পাখ-পাখালীর কণ্ঠে বসন্তের এ আগমন যেন মানবমনকে আনন্দে শিহরণে উদ্বেলিত করে তুলেছে। বনভূমি নতুন পত্রপল্লবে বিচিত্র ফুলের বাহারে হয়ে উঠেছে রঞ্জিত, নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে পুলকিত স্বচ্ছলতার এক প্রগাঢ় নিকুঞ্জ।
১১. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীতের রিক্ততার মধ্যে কবির অতীত জীবনের যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় তা লেখ।
উত্তর : শীত ঋতু প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততার রূপ। শীতের প্রকোপে বৃক্ষলতা পত্রহীন, পুষ্পহীন পাণ্ডুর এবং শ্রীহীন হয়ে যায়। এমন রিক্ত নিঃস্ব প্রকৃতিকে তাই সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো মনে হয়। রিক্ত শীতের সাথে রিক্ত সন্ন্যাসীর অপূর্ব সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন কবি তাঁর প্রিয়জন হারানো রিক্ত নিঃস্ব অনিকেত জীবনে। শীতের রিক্ততার মত কবির হৃদয় বেদনাবিধুর।
কারণ কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে অনির্বচনীয় শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর কাব্য সাধনায় ছন্দপতন ঘটতে থাকে। এক দুঃসহ বিষন্নতায় কবির মন আচ্ছন্ন হয়ে আছে রিক্ততার হাহাকারে। যে রিক্ততা রয়েছে শীত প্রকৃতিতেও। তাই কবি তাঁর অতীত জীবনের রিক্ততার আশ্চর্য সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন নিঃস্ব রিক্ত শীতের মধ্যে।
১২. “কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে !”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। দখিনা দুয়ার আজ খোলা। চারিদিকে প্রকৃতি সেজেছে নবোঢ়া কন্যার মতন। কবির পরিচয় এই বসন্তের গান গাওয়াতে বসন্তকে “Come, gentle spring! ethercal mildness! come”. এই বলে থমসন একদিন যে উক্তি করেছিলেন জগতের কবিকুলের তাইং শাশ্বত ধ্যান ধারণা। অথচ আমাদের কবি তা থেকে অন্যথা। কবিমন এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং বসন্ত সমাগমনে ভ্রুক্ষেপহীনতার কারণ বিশ্লেষণ করে বলেছেন।
কবি আজ বহুদিন ধরে প্রিয়জন বিরহিত। তাই শীতের জীর্ণতা আর রিক্ততার মাঝে কবি খুঁজে পান নিজের জীবনের সাদৃশ্য। কবির প্রথম জীবনের আলোর দিশারী, বর্তমান সম্পদপূর্ণ সুখী জীবনে আর নেই। যে দিয়েছে কবিকে অনুপ্রেরণা, কবিকে প্রস্ফুটিত ও বিকশিত করার জন্য যার আয়োজন ছিল ব্যাপক, সে রিক্ত শীতের মতন পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে হারিয়ে গেছে।
কবির বসন্ত দিনে সেই সর্বশক্তি মাঘের সন্ন্যাসী গভীর বিষাদের রাগিনী ধ্বনিত করেছে দিক হতে দিগন্তে। তাইতো কবি বসন্ত বন্দনায় নিজেকে করেননি ব্যাপৃত। ফিরে গেছেন অতীত জীবনের স্মৃতির কাছে। তাই চারিদিকের পুষ্পিত ফাল্গুন মনে হয় কবির কাছে বেদনাবিধুর। স্মৃতির দংশন জ্বালায় কবিমন উদাসী এক বাউল- যেখানে সুখ নেই, নেই কোন আনন্দের বার্তা।
১৩. “অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে ফুলে-ফুলে সাজানো, সৌরভমুখর মাদকতাপূর্ণ প্রকৃতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে। এসেছে বাতাবি লেবুর মন উদাস করা সুবাসে, পাখির গানে, ভ্রমরের গুঞ্জনে আর আম্রমুকুলের সুরভিতে। শীতের জরাজীর্ণতার হয়েছে অবসান। অথচ সাড়ম্বরে জেগে ওঠা প্রকৃতির এতসব আহ্বান কবির মনে জাগাতে পারে নি কোন আনন্দের সুর। আনে নি কোন শিহরণ। কেননা পুষ্পশূন্য, রিক্ত হস্তে কিছুকাল পূর্বেই শীত ঋতু বিদায় নিয়েছে।
শীতের আগমন ও বিদায়ে প্রকৃতি থেকেছে নীরব। শীতের এ রিক্ত ও নিঃস্বভাব কবিচিত্তে যে বেদনার সঞ্চার করেছে তার আবেগেই তিনি নির্মোহ এবং নিশ্চল। কবির ভক্তকূল তাঁকে বসন্তের আগমনী সংবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কবি উদাসীনভাবে বলেছেন, সত্যিই বসন্ত এসেছে কি না কিংবা বসন্তের আগমনী গান বেজেছে কি না তা তিনি জানেন না। কখন চুপিসারে তাঁর দ্বারে বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে তা তিনি লক্ষ্য করেন নি। ফলে তিনি বসন্তকে স্বাগত জানাতে পারেন নি। তাই কবির ব্যথাতুর হৃদয়ের বাণী-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?”
১৪. বসন্তের সৌন্দর্য কবির কাছে অর্থহীন কেন?
উত্তর : বন্তের আগমনের পূর্বক্ষণে কবি তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। তাই বসন্তের সৌন্দর্য কবির মনে আনন্দ দিতে পারেনি। বেগম সুফিয়া কামাল তাঁর হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের জনকে হারিয়েছেন। তাই বসন্তের সৌন্দর্য কবির কাছে অর্থহীন, কারণ কবির হৃদয় দুঃখভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্ত তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তাঁর কাছে অর্থহীন, মনে কোনো আবেদন জানাতে পারছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর প্রথম স্বামী ও কাব্যসাধনার প্রেরণা পুরুষের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির
অন্তরে যে বিষন্নতা জাগে, তারই সুস্পষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় ফুটে উঠেছে।
শিক্ষার্থীরা, তোমরা চাইলে এখানে আলোচিত প্রশ্নগুলো উত্তরসহ একটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারো। ওপরে দেওয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে তাহারেই পড়ে মনে অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর সংগ্রহ করে নাও।