ছোটদের নৈতিক গল্প, প্রায়ই বাড়িতে মায়েরা ছোট বাচ্চাদের গল্প বলে থাকে। আমরাও যখন শিশু ছিলাম, তখন আমাদের বাবা-মা ও দাদা দাদী তারা ভালো গল্প বলতেন। আজও যখন শিশুরা রাতে ঘুমাতে যায়, সে সময় প্রায়ই মায়ের কাছ থেকে ভালো ভালো গল্প শুনতে পছন্দ করেন।
যখন আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ একসাথে উপস্থিত থাকে। সেখানে গল্প এবং বিনোদন সম্পর্কিত জোকস শোনা যায়। আজও, গ্রামে বা শহরের সর্বত্র, দাদা-দাদি এবং বাবা-মা তাদের সন্তানদের অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প শোনান।
তাই এই আর্টিকেলে আমরা নিয়ে এসেছি অনেক বিস্ময়কর, প্রাণবন্ত, কমনীয় এবং বিনোদনমূলক গল্পের বাক্স। যেটিতে কচ্ছপ এবং খরগোশ, শিয়াল এবং উট, মঙ্গুস এবং কৃষক ছাড়াও আপনি অনেক অনুপ্রেরণামূলক ছোট নৈতিক গল্পও পড়তে পারেন।
বাংলা নৈতিক বিনোদনমূলক গল্প
এই বাংলায় গল্পগুলি শিশু, বয়স্ক, পিতামাতা এবং সমস্ত বয়সের মানুষের জন্য খুব অনুপ্রেরণাদায়ক। যার কারণে আমাদের জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতি ভালভাবে পরিচালিত হয়। আমরা সে বিষয়ে অনুপ্রেরণা পেতে গল্পগুলো পড়া উচিৎ।
কচ্ছপ এবং খরগোশের গল্প
একবার কচ্ছপ এবং খরগোশের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। দুজনের মধ্যেই প্রথমে এক জায়গায় পৌঁছানোর জন্য বাজি ধরা হয়েছিল। এরপর কচ্ছপ ও খরগোশ সেই দৌড়ে অংশ নেয়। দুজনেই সেই দৌড়ে নিজেদের এগিয়ে রাখার চেষ্টা শুরু করেন।
কচ্ছপ সাধারণত খুব ধীর গতিতে চলে। যেখানে খরগোশ খুব দ্রুত হাঁটে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর খরগোশ ভাবল একটু বিশ্রাম নেওয়া উচিত। সে আরাম করতে লাগল। কচ্ছপ ধীরে ধীরে চলতে থাকে। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর খরগোশ বুঝতে পারল কচ্ছপটি অনেক দূরে চলে গেছে।
এবার খরগোশ খুব দ্রুত গতিতে হাঁটতে শুরু করল। কিন্তু কচ্ছপটি থেমে না থেকে ধীরে ধীরে হেঁটে তার গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেল। এরপর চেষ্টা করেও খরগোশটি প্রথমে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ কচ্ছপটি ধীরে ধীরে হেঁটে প্রথমে পৌঁছেছিল।
তাই এই গল্প থেকে আমরা শিখি যে আমাদের জীবনেও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের কখনই নিজেদের নিয়ে গর্ব করা উচিত নয় যে আমরা খুব উজ্জ্বল। কখনও কখনও একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে হেরে যায়।
একজন অহংকারী মানুষের গল্প
অহংকারী মানুষ ছিলেন। সে ভেবেছিল আমি যা চাই তাই করব, আমি যা বলি ঐটা ঠিক। আমি সবচেয়ে শক্তিশালী। আমি বিশ্বের সবচেয়ে ধনীও। এই ভেবে সে অভিমানে মত্ত থাকলে কিন্তু সময়ের বিপর্যয় এমনই। তার থেকে কেউ রেহাই পাবে না। ধীরে ধীরে সময় অতিবাহিত হতে থাকে এবং কিছু দিন পর অহংকারী লোকটির বিয়ে হয়।
বিয়ের পর স্ত্রী তার বাড়িতে আসেন। এখন সেও তার স্ত্রীর তুলনায় তার মত প্রকাশ করতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে কিছু দিন পর দুজনের মধ্যে তুমুল মারামারি শুরু হয়। পরিস্থিতি তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সেই অহংকারী ব্যক্তি আদালতের দ্বারস্থ হতে থাকে। বারবার আদালতে যাওয়া পছন্দ করতেন না। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যৌতুক থেকে হয়রানির অনেক অভিযোগ এনেছিলেন তার স্ত্রী। এর পর আস্তে আস্তে ভেতর থেকে ভেঙ্গে পড়তে থাকে।
কয়েকদিন আদালতে মামলা চলার পর তিনি হেরে যান। এরপর তার স্ত্রী তাকে তালাক দেয়। তার পরও আদালতের নির্দেশ আসে উল্টো। আদালতের বিচারক আদেশ দেন, আপনার যা কিছু সম্পত্তি আছে। আপনাকে তার সম্পত্তির অর্ধেক আপনার স্ত্রীকে দিতে হবে। ভরণপোষণ হিসেবে। একথা শুনে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় দেখে তিনি খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। এখন সে বুঝতে পেরেছিল যে তার স্ত্রীই তার অহংকার ভেঙে দিয়েছে।
এই গল্পটি আমাদের বলে যে আমাদের খুব বেশি গর্ব করা উচিত নয়। অন্যথায়, সময় এত শক্তিশালী যে এর প্রভাবে কোন শব্দ নেই।
আরও দেখুন: কষ্টের স্ট্যাটাস মেসেজ, লেখা সহ পিকচার।
কৃষক এবং মঙ্গুসের গল্প
এক গ্রামে এক কৃষক ও তার স্ত্রী থাকতেন, তার একটি ছোট ছেলেও ছিল। কৃষক দম্পতি একটি মঙ্গুস পালন করতেন। পরিবারের সবাই সেই মঙ্গুসটিকে খুব ভালবাসত। একদিন কৃষক ও তার স্ত্রী কোনো কাজে খামারে গেল। তিনি মঙ্গুসকে তার সন্তানের যত্ন নিতে বললেন।
এ সময় শিশুটি তার বাড়িতে খেলছিল। ঠিক তখনই বাইরে থেকে একটা সাপ আসলো। মঙ্গুস সাপটিকে দেখে এবং সাপটির সাথে লড়াই করে সাপটিকে মেরে ফেলল। কৃষক ও তার স্ত্রী বাড়ি ফিরলে। এ সময় তিনি মঙ্গুর মুখে রক্ত দেখতে পান।
কৃষক ও তার স্ত্রী তারা অনুমান করেন যে মঙ্গুটি তাদের সন্তানকে হত্যা করেছে। তারপর লাঠি তুলে মুঙ্গুসকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
ভেতরে গিয়ে দেখেন শিশুটি আরামে ঘুমাচ্ছে। সেখানে একটি খুব বড় সাপ মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। এই দৃশ্য দেখে তারা নিজেদের জন্য দুঃখ পেতে শুরু করে।
এই দৃশ্য দেখে তিনি পুরো সত্যটা বুঝতে পারলেন। তারা তদন্ত না করে, কিছু না বুঝেই মঙ্গুসটিকে হত্যা করে। এই গল্প থেকে আমরা শিখি যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে তদন্ত করে দেখা উচিৎ।
হাতি এবং বানরের গল্প
এক বনে থাকত হাতি আর বানর। বানরটি আম গাছের উপরে থাকত, আর হাতি বনে ঘুরে বেড়াত। বানর গাছের ডালে এদিক ওদিক লাফাতো, মাঝে মাঝে পাতার আড়ালে লুকিয়ে ঘুমাতো। একদিন হাতিটি সেখানে ঘুরতে ঘুরতে এলো, হাতি বলল তার কোন বন্ধু নেই। এরপর দুজনেই খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়।
দুজনে একসাথে ঘুরে বেড়াতো, খেলতো আর মজা করতো। বানর গাছ থেকে ফল ছিনিয়ে হাতিকে খাওয়াত। হাতিও কোথাও থেকে খাবার এনে বানরকে দিত।
একবার বনে ভয়ানক ঝড়তুফান এলো। যার মধ্যে সব গাছ ভেঙে পড়ে এবং বন্যা প্লাবিত হয়েছে। চারিদিকের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আম গাছগুলোও ভেঙে পানিতে পড়ে যায়।
এ সময় বানরটি গাছে ঘুমিয়ে ছিল আর তখন সে পানিতে ডুবে যেতে থাকে কিন্তু বানর সাঁতার জানত না। এ দৃশ্য দেখে হাতিটি ঠিক সেই মুহূর্তে বানরটিকে বাঁচাতে ছুটে যায় হাতিটি। সে পানিতে গিয়ে তার বানর বন্ধুকে বাঁচাল। এটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে একজন বন্ধুকে বিপদে রক্ষা করা উচিত।
বানর এবং কুমিরের গল্প
এক বনে নদীর তীরে একটি জাম গাছ ছিল, একটি বানর সেই গাছের উপর বাস করত। বানরটি সেই গাছ থেকে মিষ্টি জাম পেরে খেত। বানরটি পুরো বনে ঘুরে বেড়াতেন এবং লাফালাফি আর মজা করতেন। একদিন একটি কুমির নদীর তীরে এল, কুমির দেখল বানর জাম খাচ্ছে। তখন সেই কুমিরটিও খুব ক্ষুধার্ত ছিল।
কারণ কুমিরটি অনেক দিন খাবার খায়নি। তাই বানরটি কুমিরটিকে জাম খেতে বললেন। তারপর বানর সেই গাছ থেকে ভালো জাম পেড়ে কুমিরকে দিল। এভাবেই বন্ধু হয়ে গেল কুমির আর বানরের মধ্যে। প্রতিদিনই নদী তীরে আসতো কুমির বানরের কাছে ফল চাইতেন। তারপর বনের প্রতিটি গাছে বানর ঝাঁপিয়ে পড়ত, আর জাম পেড়ে কুমিরকে দিত।
একইভাবে অনেক দিন দেওয়ার পর, একদিন কুমিরটি তার নিজের বাড়িতে গেল। নদীর ওপারে কুমিরের বাড়ি সেখানে কুমিরের স্ত্রী থাকতেন। কুমির তার স্ত্রীকে মিষ্টি জাম ও বানরের কথা বলল। তখন কুমিরের স্ত্রী বললেন আমার জন্যও জাম আনবে। পরের দিন কুমির যখন বানরের কাছে জাম চাইতে গেল, তখন কুমির তার স্ত্রীর কথা বলে জাম চাইলো। বানরটি তখন জাম পেড়ে দিল কুমিরের স্ত্রীর জন্য।
তারপর কুমির তার স্ত্রীর জন্য জাম নিয়ে গেলেন। স্ত্রী কুমিরটি সেই ফলটি খেয়ে খুব খুশি হলো। তখন স্ত্রী কুমিরটি ভাবলেন, এই ফলটি যখন এত মিষ্টি, তাহলে যে এই ফল পেড়ে দেয়, না জানি তার কলিজাটা কতটা মিষ্টি হবে। একই সঙ্গে স্ত্রী কুমিরটি স্বামীকে বানরের কলিজা আনতে বলেন।
কুমির বানরের কছে গিয়ে বললেন, আমার স্ত্রী তোমাকে আমার বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছে। বানর যাওয়ার জন্য রাজি হলো। কুমির বানরটিকে পিঠে নিয়ে চলে গেল। দুজনে যখন নদীর মাঝখানে চলে গেল। তখন কুমির বললো আমার বউ তোমার কলিজা খেতে চেয়েছে।
একথা শুনে বানরটি হতভম্ব হয়ে গেল। তারপর বানরটি এই ঝামেলা থেকে মুক্তির উপায় ভাবতে শুরু করলেন। বানরটি একটি খুব ভাল বুদ্বি করলো বানরটি কুমিরকে বলেন, আরে, কুমির ভাই আমি তো সেই জাম গাছে আমার কলিজা রেখে এসেছি।
তখন কুমির বলল ঠিক আছে, সেখান থেকে আপনার কলিজা নিয়ে আসুন। তারপর দুজনেই নদীর তীরে গাছের কাছে পৌঁছে গেল। তারপর বানর লাফ দিয়ে গাছে উঠে গেল। তারপর বানরটি বলল, আরে বোকা.. কেউ কি গাছে তার কলিজা রাখে।
বানরটি বলে, গিয়ে তোমার স্ত্রীকে বলে দাও তোমার চেয়ে বোকা আর কেউ নেই। একথা শুনে কুমিরটি অনুতপ্ত হতে লাগল। নিজের কাছে লজ্জিত বোধ করল।
এই গল্প থেকে আমরা জ্ঞান পাই যে কোন ঝামেলায় আটকে গেলে। তারপর ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য খুব বুদ্ধিমানের সাথে চিন্তা করা উচিত।
আরও দেখুন: প্রিয়জনকে পাঠানোর জন্য ঈদ মোবারক মেসেজ।
উট এবং শেয়ালের গল্প
একটি শিয়াল এবং একটি উট এক বনে বাস করত, দুজনেই খুব ভালো বন্ধু ছিল। দু’জনে একসাথে যে কোন জায়গায় খেতে যেতেন। একদিন শেয়াল উটকে একটা কথা বলল, নদীর ওপারে সবুজ মাঠ। তরমুজ, শসা, তরমুজ ইত্যাদি ক্ষেত। পরের দিন দুজনে একসাথে মাঠে গেল।
রাত হলে, তরমুজ ক্ষেতের মালিক তার কুঁড়েঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তাই শেয়াল ও উট উভয়েই গোপনে তরমুজ খেতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই শিয়ালের পেট ভরে গেল। কিন্তু এখনও উটের পেট ভরেনি উট সবেমাত্র খাওয়া শুরু করেছে।
তরমুজ খাওয়ার পর উট বলতে লাগলো এখন তার পেট ভরে গেছে। এখন আমি ঝাঁকুনি দিতে শুরু করছি। কিন্তু উটটি বলে যে ক্ষেতের মালিক যদি এটি শুনেন তবে আমাদের মেরেই ফেলবে। শিয়াল বললো আপনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন এবং আমাকে আরও তরমুজ খাওয়ার সুযোগ দাও। তারপর দুজনে একসাথে এখান থেকে চলে যাবো।
কিন্তু কিছুক্ষন পর শিয়াল সে "হুয়া হুয়া" বলে চিৎকার করতে থাকে। এ শব্দ শুনে তরমুজ ক্ষেতের মালিকের ঘুম ভেঙে যায়। সে লাঠি দিয়ে শেয়াল ও উটকে অনেক আঘাত করল। দুজনেই কোনোরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। তখন উট এবং শেয়ালের বাড়ি পৌঁছতে নদী পার হতে হয়।
নদী পার হওয়ার সময় শেয়ালটি উটের পিঠে চড়ে বসল। দুজনে যখন নদীর মাঝখানে চলে গেল। তখন উট বললো এখন মনে হচ্ছে গোসল করি।
তখন শিয়াল বললো না, আমি এই পানিতে ভেসে যাব আপনি আমাকে আগে নদীর তীরে ছেড়ে দাও। এর পর পানিতে গোসল করুন। কিন্তু উট এ কথা না শুনে পানিতে বসে গোসল করতে লাগলো। যার জেরে জলের প্রবল স্রোতে ভেসে যায় শিয়াল। এই গল্প থেকে আমরা বুঝতে পারি যে - লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।
দুই বন্ধুর গল্প
এক গ্রামে দুই বন্ধু থাকত। একজনের নাম রমেশ আর অন্যজনের নাম মোহন। দুজনেই একে অপরকে খুব ভালোবাসতেন। রমেশ মোহনকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিল। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও মোহন টাকা ফেরত দেননি।
একদিন রমেশ মোহনকে বলল যে আজ রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি স্বপ্নে দেখলাম যে টাকা আপনি ঋণ হিসাবে নিয়েছেন। সে তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছ। এভাবে পরের দিন রমেশ টাকা ফেরত নিতে মোহনের বাড়িতে গেলে মোহন বলল টাকাটা তোকে দিয়েছি।
তখন রমেশ বলল তুমি আমাকে ওই টাকা কখন দিয়েছ। তখন মোহন বলল যে তুমিই তো গতকাল আমাকে বলেছিলে যে আমি ওই টাকা আমি দিয়েছি, তখন সে বলল যে হ্যাঁ, তুমি স্বপ্নে সেই টাকা দিয়েছিলে। মোহন বলল, ওই টাকা তোকে দিয়েছি। তখন রমেশ বলল হ্যাঁ। এইভাবে মোহন বুঝতে পেরেছিল যে সে রমেশকে টাকা দিয়েছে। এতে রমেশ খুব কষ্ট পেল এবং মোহনের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবল।
একদিন দুজনেই বা'জি ধরেছিল। শর্তানুযায়ী তাদের একে অপরের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করার জন্য। যতক্ষণ না পেট ভরেততক্ষণ পর্যন্ত বা'জি চলবে। দুজনেই এই শর্তে রাজি হলেন।
তারপর দুজনে মিলে বা'জির জন্য একটা দিন ও সময় ঠিক করলো। সেদিন দুজনেই একে অপরের বাড়িতে খাবারের সময় স্থির করলেন। প্রথমে রমেশ মোহনের বাড়িতে খাবে। মোহনের স্ত্রী নানা রকমের সুস্বাদু খাবার তৈরি করেছিলেন।
মোহন তার বন্ধুকে প্রতিটা থালা খুব ভালোবেসে খাবার দিল। তারপর রমেশ খুব উৎসাহে সব সুস্বাদু খাবার খেয়ে নিল। ততক্ষণ তিনি খাবার খেতে থাকেন যতক্ষণ না তার পেট ভরেছিল।
পরের দিন মোহন রমেশের বাড়িতে খাবার খেতে গেল। রমেশও তার স্ত্রীকে দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরি করেছিলেন। মোহনের সামনে সব খাবার পরিবেশন করলেন। কিন্তু খাওয়ার আগে ক্ষেতের আখ চুষতে বলেন। মোহন আখ চুষতে রাজি হল, মোহন অনেক আখ চুষে খেয়েছেন।
যার কারণে মোহন ফেপে পড়েন। কারণ শর্ত ছিল পেট না ভরা পর্যন্ত খাবার দেওয়া উচিত নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বা'জি শেষ হবে না। এভাবে এত খাবার থাকা সত্বেও মোহন আখ চুষার কারনে কোনো খাবার খেতে পাননি। এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে কাউকে ঠকাবেন না।
আরও জানুন: কুরআন মুখস্থ করার জন্য সেরা টিপস!
দীপু এবং তার শিক্ষকের গল্প
অনেক ছাত্র একটি স্কুলে পড়াশুনা করত। দীপু নামের একটি ছেলেও সেখানে লেখাপড়া করে। তিনি সর্বদা কোণে কুঁকড়ে বসে থাকতেন। তার জামাকাপড়ও ছিল খুবই নোংরা। পড়াশোনায়ও সবসময় পিছিয়ে থাকতেন। সব সময় চুপচাপ বসে থাকতেন। ওই ক্লাসে একজন শিক্ষক পড়তেন।
যার নাম ছিল স্বাতী, স্বাতী ম্যাডাম সেই ছেলেটিকে প্রতিদিন দেখতেন। ছেলেমেয়েরা দীপুকে নিয়ে মজা করতে থাকে। স্বাতী ম্যামও ধীরে ধীরে দীপুকে ঘৃণা করতে লাগলেন। প্রতিদিন সে তাকে বকাবকি করত এবং পড়াশুনা করতে বলত। কিন্তু সে কিছু বলে না।
সে এভাবেই চুপচাপ বসে রইল। একইভাবে, যখন তার পরীক্ষা হয়েছিল, ফলাফল এসেছিল। সব ছাত্ররাই ভালো নম্বর পেয়েছে। কিন্তু দীপুর মার্কস ভালো ছিল না। যখন রেজাল্ট সিট চেক করা হচ্ছিল। এ সময় ম্যাডাম ও শিক্ষকরা সবাই রেজাল্ট সিট পরীক্ষা করছিলেন।
এতে একজন আনু ম্যাম ছিলেন। দীপুর রেজাল্ট সিট দেখে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। তিনি বলেন, এই ছেলে পড়ালেখায় খুব ভালো। কেন এর সংখ্যা খারাপ হতে শুরু করে? এ বিষয়ে স্বাতী ম্যাম বলেন, সে যদি কখনো পড়ালেখা না করে, তাহলে অবশ্যই তার ফলাফল খারাপ হবে। আমি এটা আগে থেকেই জানতাম।
তখন আনু ম্যাম জানালেন যে সে তার স্কুলের টপার ছাত্র। আগের সব রেজাল্ট সিট দেখালেন স্বাতীকে ম্যামকে। এটা দেখে স্বাতী খুব অবাক হল। তারপর পরের দিন ক্লাসে গেলে দীপুর সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলে। খুব আদর করে জিজ্ঞেস করলেন ব্যাপারটা কি। অনেক জিজ্ঞেস করতেই দীপু জানায় তার মা মারা গেছে।
এ কারণে তার বাবা তাকে মনোযোগ দিতে পারছেন না। এ কারণে তার পোশাক ময়লা থাকে। মা চলে যাওয়ার পর পড়ালেখা করতেও ভালো লাগে না। এই কথা শুনে স্বাতী ম্যাম নিজেকে খুব লজ্জিত বোধ করতে লাগলেন।
এরপর সে দীপুকে খুব ভালোবাসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সে পড়ালেখায় উৎসাহিত হতে থাকে। দীপুও ধীরে ধীরে পড়াশোনায় উত্তেজিত হয়ে পড়াশুনা শুরু করে। নিজের কাপড় নিজেই পরিষ্কার করতে লাগলেন। প্রতিদিন পরিষ্কার কাপড় পরে আসতে লাগলো। এমনকি স্কুলেও সে অন্য সব বাচ্চাদের ছাড়িয়ে গেছে।
এভাবেই যখন পরের বছর পরীক্ষা হলো। তাতে দীপু সব ছাত্রদের মধ্যে শীর্ষে এসেছে। কয়েক বছর পর স্বাতী ম্যাম অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেলেন। সব ছাত্ররা তাকে উপহার দিচ্ছিল। ঠিক তখনই দীপুও তার বাসা থেকে উপহার নিয়ে আসে। কাগজে মোড়ানো কিছু নিয়ে এসেছিল।
সব ছাত্ররা দেখে হাসতে লাগল, কিন্তু ম্যাডাম খুব আদর করে নিলেন। সে কাগজটি খুললে তাতে একটি পুরনো ব্রেসলেট ছিল। দীপু বলল এই ব্রেসলেট আমার মায়ের। আমি চাই তুমি এটা পরো কারণ তুমি আমার মায়ের মতো। স্বাতী ম্যাম এই কথা শুনে খুব খুশি হলেন এবং সেই ব্রেসলেটটা পরলেন।
তারপর সে অন্য জায়গায় চলে গেল। তারপর অনেক বছর পর একদিন স্বাতী ম্যাম এর স্কুলে দীপু একটি গাড়ি নিয়ে এসে থামল। কালেক্টর এসেছেন বলে পুরো স্কুলে হৈচৈ পড়ে গেল।
সবাই মিলে স্কুলের সবকিছু গুছিয়ে নিতে লাগলো। দুই গার্ড গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা খুলে দিল। এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলেন খুব লম্বা কালেক্টর। সে ক্লাসে এলো। এসে স্বাতী ম্যামের পা ছুঁয়ে দিল।
এটা দেখে সে খুব অবাক হল। তখন ছেলেটি বলল আমি দীপু। তুমি আমাকে চিনতে পারো না। এটা দেখে সে খুব খুশি হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।
তারপর দীপু দেখল স্বাতী ম্যাম তখনও সেই ব্রেসলেট পরে আছে। এভাবে যখনই দীপু বা স্বাতী ম্যামের ছুটি থাকত, দুজনেই অবশ্যই দেখা করতে যেত। এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে একটি শিশু যদি অনুপ্রাণিত হয় তবে সে খুব দ্রুত এবং সহজে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
শিশুদের জন্য নৈতিক এবং বিনোদনমূলক গল্প সম্পর্কে, এখানে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন রয়েছে:
কেন শিশুদের জন্য নৈতিক গল্প গুরুত্বপূর্ণ?
নৈতিক গল্প শিশুদের সঠিক এবং ভুলের বোধ বিকাশে সহায়তা করে। তারা সততা, দয়া, বন্ধুত্ব, অধ্যবসায় এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে মূল্যবান জীবনের পাঠ শেখাতে পারে। একটি কাল্পনিক সেটিংয়ে এই থিমগুলি অন্বেষণ করে, শিশুরা তাদের নিজেদের জীবনে বুঝতে এবং প্রয়োগ করতে শুরু করতে পারে।
নৈতিক গল্প পড়ার উদ্দেশ্য কি?
একটি নৈতিক গল্প পড়ার মাধ্যমে, একটি শিশু শিখে যে এটি একটি গুণ "বেঁচে থাকা" কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং নৈতিক জীবন সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি অর্জন করে। প্রকৃতপক্ষে, কিছু ঐতিহ্যবাহী চরিত্রের শিক্ষাবিদ শিক্ষকদের পিছনে সরে যেতে এবং গল্পের শক্তিতে হস্তক্ষেপ না করার পরামর্শ দেন।
নৈতিক গল্প থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
নৈতিক গল্প শিশুদের সিদ্ধান্ত এবং কর্ম প্রভাবিত করে। শিশুরা কল্পনা ও বিবেকের মাধ্যমে গুণের বিকাশ ঘটায়। তারা নৈতিক গল্প এবং চরিত্রের মাধ্যমে সততা, সাহস এবং দয়া শিখে, বিশেষ করে একটি ব্যস্ত সমাজে। নৈতিক গল্পগুলি শিশুদের ভাল এবং ভুল সম্পর্কে একটি শক্তিশালী ধারণা দেয়।
প্রতিটি গল্পেরই কি গল্পের নৈতিকতা প্রয়োজন?
নৈতিকতা সঠিক এবং ভুল সম্পর্কে একটি পাঠ শেখায়। যদিও কল্পকাহিনীগুলি নৈতিকতায় সমৃদ্ধ, তবে অন্যান্য ধরণের কথাসাহিত্য তাদের উপর নির্ভর করে না। পরিবর্তে, কথাসাহিত্য একটি থিম সম্বোধন করা উচিত, একটি বার্তা যা মানুষের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মন্তব্য বা অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এগুলি পাঠ নয়, অন্তর্নিহিত অর্থের মতো।
আমি কিভাবে বয়স-উপযুক্ত গল্প চয়েজ করতে পারি?
আপনার সন্তানের বয়স এবং বিকাশ বিবেচনা করুন। ছোট বাচ্চারা স্পষ্ট নৈতিকতার সাথে সহজ গল্পগুলি উপভোগ করতে পারে, যখন বড় বাচ্চারা আরও জটিল থিম পরিচালনা করতে পারে। বয়সের সাথে মেলে এমন চিত্র সহ বই খুঁজুন এবং একটি গল্পরেখা যা তাদের আগ্রহগুলি ক্যাপচার করে।
আমাদের শেষ কথা
ছোট গল্প আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা ছোট থেকে বড় হয়ে উঠি ছোট ছোট অনুপ্রেরণামূলক গল্প শুনে। সেই গল্পগুলো আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ছোটবেলা থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত মানুষের পুরো গল্পই জানা যায় এই ছোট গল্পগুলো থেকে। আমরা আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে দেওয়া ছোট গল্পগুলো অবশ্যই পছন্দ করেছেন।