প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম (নমুনাসহ) Word Doc File


 চাকরি অথবা একাডেমিক প্রয়োজনীয়তা, আমাদের সকলেরই প্রত্যয়ন পত্রের দরকার হয়। কেননা প্রত্যয়ন পত্র ব্যক্তির দাখিল করা নথিপত্রের সত্যতা প্রমাণ করে। কোর্সটিকার আজকের আলোচনায় আমরা প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম এবং এর কিছু নমুনা সম্পর্কে জানব। এছাড়াও কিভাবে প্রত্যয়ন পত্র পাওয়ার জন্যে আবেদন করতে হয় তা নিয়েও জানব।

প্রথমেই জানা যাক, প্রত্যয়ন পত্র কাকে বলে এবং কেনো দেয়া হয়? প্রত্যয়ন পত্র বলতে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে প্রদানকৃত নিশ্চয়তা সনদ বলা যায়। অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি কোন বিশেষ কাজে পারদর্শী হলে বা তার চারিত্রিক দিকের সততার নিশ্চয়তা দিয়ে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রদানকৃত সনদকে বুঝায়।

প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা হয়ে থাকেন তাহলে আপনার অনেক সময় নিম্নস্ত কর্মীদের চারিত্রিক সনদ দিতে হতে পারে৷ আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে থাকলে তাহলেও দরকার হতে পারে।

প্রত্যয়ন পত্র কেমন হয়ে থাকে?

প্রত্যয়ন পত্র হচ্ছে এক ধরনের সনদ। প্রত্যয় বলতে “আমি কোন কিছুর নিশ্চয়তা দিচ্ছি” এমন বক্তব্যকে বোঝায়। এই সনদে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাকে কিনা প্রত্যয়ন করা হচ্ছে তার ভালো দিক উল্লেখপূর্বক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়।

প্রত্যয়ন শব্দের আভিধানিক ব্যাখ্যাই হলো- নিশ্চয়তা বা আস্থা দেয়া। তাহলে বোঝা গেলো কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের সত্যায়ন করে যে সনদ দেন, তাই প্রত্যয়ন পত্র।

মনে করুন, আপনার এলাকার চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলর আপনার চারিত্রিক নিশ্চয়তা প্রদানপূর্বক যে সনদ দেন তাই প্রত্যয়ন পত্র। এছাড়া আপনি ছাত্রাবস্থায় আপনার ছাত্রত্বের প্রমাণ হিসেবে স্কুলের শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান যে সনদ দেয় সেটিও কিন্তু প্রত্যয়ন পত্র।

এছাড়াও, কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে সেখানের কাজের দক্ষতার উপর যে সনদ দেয়া হয় সেটিও প্রত্যয়ন পত্র। এই প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করতে বিশেষ পদাধিকার মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন হয়।

প্রত্যয়ন পত্র কত ধরনের হয়?

একটি প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম কেমন হবে, তা নির্ভর করে কোন ধরনের প্রত্যয়ন দেয়া হচ্ছে, তার ওপর। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী কয়েক রকম প্রত্যয়ন পত্র দেয়া হয়। যেমন-

  • ‌চারিত্রিক প্রত্যয়ন পত্র
  • জাতীয়তার প্রত্যয়ন পত্র
  • মৃত্যুর প্রত্যয়ন পত্র
  • উত্তরাধিকার প্রত্যয়ন পত্র
  • মুক্তিযোদ্ধা মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
  • চাকরির প্রত্যয়ন
  • ‌শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র
  • বেকারত্বের প্রত্যয়ন পত্র
  • কোম্পানির প্রত্যয়ন পত্র
  • উপজাতি মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
  • ভুমিহীন মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
  • ‌ বিবাহিত মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
  • এতিম মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
  • অবিবাহিত মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
  • পুনঃর্বিবাহ মর্মে প্রত্যয়ন পত্র

প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করবে তার নিজের কম্পিউটারে ওয়ার্ড ফাইলে বা নিজের ডায়েরিতে আগে থেকেই কাঠামো (Format) তৈরি করা থাকে। যখন দরকার হয় যাকে প্রত্যয়ন করছে তার ব্যক্তিগত তথ্য সঠিক ভাবে প্রদানের মাধ্যমে সিলমোহর এবং স্বাক্ষর দিয়ে দিয়ে দেয়। একটি প্রত্যয়ন পত্র লেখার ক্ষেত্রে নিচের সাধারণ নিয়মগুলো বজায় রাখা হয়।

১. শুরুতেই উপরে লেখা থাকবে “প্রত্যয়ন পত্র”।
২. এরপর যাকে প্রত্যয়ন করা হচ্ছে তার সম্পূর্ণ নাম, পিতা-মাতার নাম এবং ঠিকানা।
৩. এরপর কোন বিষয়ের ওপর প্রত্যায়ন করা হচ্ছে, তার সংক্ষেপে তার বর্ণনা।
৪. প্রত্যয়ন পত্র যে দেবে তার সীলমোহর এবং নাম স্বাক্ষর করা থাকতে হবে। এছাড়া যিনি প্রত্যয়ন করছেন তিনি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে থাকলে তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সিল মোহর থাকাও আবশ্যক।

লক্ষ্যণীয়: একটি প্রত্যয়ন পত্র এমন করে লিখতে হবে, যাতে এর ভাষা সহজ-সরল ও সাবলীল হয়। যাতে যে কেউই পড়ে কী বলা হয়েছে, তা বুঝতে পারে।

কিছু প্রত্যয়ন পত্রের নমুনা

বাংলা এবং ইংরেজি যে ভাষাতেই প্রত্যয়ন লেখা হোক না কেনো, এর শুধু ভাষায় পরিবর্তন হবে। বাকি সব নিয়ম-কানুন একই রকম থাকবে। তহলে বলা যায় বাংলা এবং ইংরেজি প্রত্যয়নপত্র লেখার নিয়ম একই। অর্থাৎ ফরমেট একই থাকবে৷

এ পর্যন্ত আমরা প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। এখন কয়েকটি উদাহরণ দেখে নিলে আপনি সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার একটি ধারণা নিতে পারবেন৷

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র লেখার নিয়ম

প্রত্যয়ন পত্র 

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, ………………., পিতা: ………………. মাতা: ………………., গ্রাম/মহল্লা: ………………., ডাকঘর: ………………., থানা: ………………., উপজেলা: ………………., জেলা: ………………., অত্র বিদ্যালয়ের একজন………………., শ্রেণীর ছাত্র/ছাত্রী। সে ………………. সালে বার্ষিক এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়। সে বিদ্যালয়ের নিয়ম কানুন সর্বদা মান্য করেছে। আমার জ্ঞাতসারে তার স্বভাব ও চরিত্র ভালো। ভর্তির তথ্য বর্ণনা অনুসারে তার জন্ম তারিখ ………………. ।

বিদ্যালয় থাকাকালিন সে কোন অনিয়ম ও দৃষ্টিকটু কর্মে জড়িত ছিল না। আমি তার সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং সাফল্য কামনা করছি।

তারিখ: …………………..

স্বাক্ষর
মো: সাইফুল ইসলাম,
প্রধান শিক্ষক, কলেজিয়েট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরিশাল।
(সিলমোহর)

কোম্পানির প্রত্যয়নপত্র লেখার নিয়ম

প্রত্যয়ন পত্র 

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, ………………., পিতা: ………………. মাতা: ………………., গ্রাম/মহল্লা: ………………., ডাকঘর: ………………., থানা: ………………., উপজেলা: ………………., জেলা: ……………….। ফরচুন সুজ লিমিটেড কোম্পানিতে দীর্ঘদিন ………………. পদে অত্যন্ত সততা, দক্ষতা এবং কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি প্রত্যাশা করছি যে তিনি আগামী দিনে যে প্রতিষ্ঠানেই যাবেন, সেই প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করবেন।

আমি তার ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্য কামনা করছি।

তারিখ: …………………..

স্বাক্ষর
মো: সাইফুল ইসলাম,
চেয়ারম্যান, ফরচুন সুজ লিমিটেড, ঢাকা।
(সিলমোহর)

চারিত্রিক সনদপত্র লেখার নিয়ম

প্রত্যয়ন পত্র 

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, ………………., পিতা: ………………. মাতা: ………………., গ্রাম/মহল্লা: ………………., ডাকঘর: ………………., থানা: ………………., উপজেলা: ………………., জেলা: ……………….। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আমার জ্ঞাত মতে তিনি কোন রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী কাজে জড়িত নন। তিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারি।

আমি তার উন্নতি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।

তারিখ: …………………..

স্বাক্ষর
মো: সাইফুল ইসলাম,
প্রভাষক, সরকারী বিএম কলেজ, বরিশর।
(সিলমোহর)

নাগরিক সনদপত্র লেখার নিয়ম

প্রত্যয়ন পত্র

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, ………………., পিতা: ………………. মাতা: ………………., গ্রাম/মহল্লা: ………………., ডাকঘর: ………………., থানা: ………………., ওয়ার্ড: ………………., উপজেলা: ………………., জেলা: ……………….। তিনি অত্র এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। আমার জ্ঞাতমতে তিনি কোন রাষ্ট্র-সমাজবিরোধী কর্মে জড়িত নন। তার স্বভাব ও চরিত্র ভালো। আমি তার সবরকম উন্নতি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।

তারিখ: …………………..

স্বাক্ষর
মো: সাইফুল ইসলাম,
কাউন্সিলর, ১ নম্বর ওয়ার্ড, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, বরিশাল।
(সিলমোহর)

প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজনীয়তা? 

নিজের কাজের যোগ্যতার স্বীকৃতি পেতে কিংবা নতুন জায়গায় কাজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে৷ আবার এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে যেতে, এক কলেজ হতে অন্য কলেজে ভর্তি হতে প্রত্যয়নের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কেউ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলেও কলেজ থেকে তার প্রত্যয়ন পত্র দরকার হয়।

এভাবে যদি কেউ নতুন চাকরিতে যোগ দিতে চায় তাহলে তার নতুন জায়গায় যেতে প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন হয়। এছাড়া চাকরিতে যোগ দিতে চারিত্রিক বা নাগরিকত্ব সনদেরও দরকার হয়৷

আপনি ভূমিহীন, প্রতিবন্ধী অথবা পুনঃবিবাহ করতে চান তার মর্মে আপনার প্রত্যয়নের প্রয়োজন হতে পারে। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক, পেশা, সামাজিক এবং শিক্ষাজীবনে নানা কারণে আমাদের প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রত্যয়ন পত্রের পেতে আবেদন করবেন যেভাবে

অনেক সময় মুখে বলেই প্রত্যয়ন পত্র নেয়া যায়। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে একটি প্রত্যয়ন পত্র পেতে আবেদন পত্রও লিখতে হতে পারে। তাই প্রত্যয়ন পত্র নিতে আবেদন লেখা শিখে রাখা প্রয়োজন।

তারিখ: ২২/ ১০/ ২০২–
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক
জি.এম.হাট উচ্চ বিদ্যালয়
বাকলিয়া, চট্টগ্রাম
বিষয়: প্রত্যয়ন পত্রের জন্য আবেদন।

মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার প্রতিষ্ঠনের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। আমি গত ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বর্তমানে আমি কলেজে ভর্তি হতে চাই৷ যার জন্যে আপনার নিকট হতে আমার প্রত্যয়ন প্রয়োজন।

অতএব,মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন আমাকে উক্ত প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করে বাধিত করবেন৷

বিনীত নিবেদক,
মো: বেলাল হোসাইন
শ্রেণী: এসএসসি
রোল নাম্বার: ৫
জি এম হাট উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া, চট্টগ্রাম।

প্রত্যয়ন পত্রে WORD ফাইল


Post a Comment

Previous Post Next Post