সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। রমজান মাস একটি পবিত্র মাস। এই মাসে মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাকওয়া প্রমাণের জন্য সাওম পালন করে।
সাওম বা রোজা পবিত্র রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। তাই রোজা রাখার পর সতর্ক থাকতে হয় যেন এমন কিছু না হয়, যেটার কারণে রোজা ভেঙে যায়।
তাই সকল মুসলমানদের কথা চিন্তা করে, রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি অনেকের উপকারে আসবে। তো চলুন শুরু করা যাক:-
মূলত তিনটি কারণে রোজা ভেঙে যায়। সেগুলো হলো:
(১) খাবার খাওয়া,
(২) পানীয় পান করা ও
(৩) স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক।
তবে এগুলো ছাড়াও কিছু কিছু কারণে রোজা ভেঙে যায়। যেগুলো জেনে রাখা প্রত্যেক রোজাদারের জন্য জরুরি। সংক্ষেপে রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো নিচে দেওয়া হল :
ভুলে খাবার খাওয়া বা পান করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড: ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)
বিড়ি-সিগারেট বা হুঁকা সেবন করা। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
কাঁচা চাল, আটার খামির বা একত্রে অনেক লবণ খাওয়া। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯)
এমন কোনো বস্তু খাওয়া, যা সাধরণত খাওয়া হয় না। যেমন- কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
পাথর, কাদামাটি, কঙ্কর, তুলা-সুতা, তৃণলতা, খড়কুটো ও কাগজ গিলে ফেলা। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)
নিজের থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)
ভুলে স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে— আবার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস সম্পর্ক করা। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)
কানে বা নাকের ছিদ্র দিয়ে তরল ওষুধ দেওয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১২৭)
দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালিতে চলে যায়। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৬৭)
মুখে পান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক করা। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১৭২)
হস্তমৈথুন করা। (ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, খণ্ড : ০৬, পৃষ্ঠা : ৪১৭)
রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় কুলি কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় কণ্ঠনালিতে পানি চলে যাওয়া। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ৪২৯)
কাউকে জোর-জবরদস্তি করে পানাহার করানো। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)
রাত মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরি খাওয়া। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেলা। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩৩৭)
সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ভুলে দিনে ইফতার করা। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৯)
যদি কেউ রাত ধারণা করে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়ে যায়, অতঃপর সুবহে সাদিকের কথা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ সহবাস থেকে বিরত হয়ে যায়। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৪)
বৃষ্টি বা বরফের টুকরো খাদ্যানালির ভেতরে চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)
উপরে উল্লেখিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকলে আমাদের রোজা ভঙ্গ হবেনা। আশা করব সকল মুসলমান ভাইয়েরা সঠিকভাবে রোজা পালন করবেন এবং উপরে উল্লেখিত কাজগুলো থেকে সবাই বিরত থাকবেন।