২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
আপনি যদি ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার জন্য সুন্দর একটি স্ক্রিপ্ট খুজে থাকেন, তাহলে এই নিবন্ধটি আপনার জন্য।
১। ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সম্মানিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সুধীমন্ডলি সকলকে স্বাগতম। উপস্থিত সকলকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছি সেই সকল বীর ভাষাশহিদকে; যাদের আত্নত্যাগের কারনে বাংলা ভাষা বিশ্বময় মর্যাদার আসনে অধিষ্টিত হয়েছে।
১৯৫২ সালের এই দিনে সংঘটিত বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানে গণ দাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রুপ ধারণ করলেও এর বীজ বপিত হয়েছিল বহু আগে, অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিলো সদূরপ্রসার। ১৯৮৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়। কিন্তু পাকিস্তানের দু’টি অংশ - পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেক মৌলিক পার্থক্য বিরাজ করেছিল।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মনে বিরুপ পতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কার্যতঃ পুর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং পাকিস্তানের এরকম একটি অবান্তর ঘোষণার জন্য মানষিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
ফলস্বরুপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেধে ওঠে। আন্দোলন দমনে ঢাকায় সমাবেশ, মছিল ইত্যাদি বে-আইনী ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পুলিশ, তাই ১৪৪ ধারা জারি করে।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি এ আদেশ (অর্থাৎ ১৪৪ ধারা) অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি আসা মাত্রই পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত সহ আরও অনেকেই। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে উঠে।
শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রিয় সরকার শেষ-অবধি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যততম রাষ্ট্রভাষার স্বাকৃতি প্রদান করে।
২০০০ সালে “ইউনেস্কো” ৫২’ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা ও কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি-কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘাষনা করে। যা সারা পৃথিবীজুড়ে সাংবার্ষিকভাবে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হয়।
ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, এমন নজির বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে এতখানি আত্মত্যাগ বাঙ্গালি ছাড়া আর কোনো জাতিকে করতে হয়নি। ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে দিয়েছে আপন সত্তা উন্মোচনের সুমহান মহিমা ও গৌরব। ভাষা শহীদের স্মৃতি রক্ষার লালিত প্রেমে দেশময় গড়ে উঠেছে অসংখ্যা শহীদ মিনার।
২১ শে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলা ভাষাকে মর্যাদায় আসীন করার বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম নয়, আত্মচেতন সমৃদ্ধ জাতীয় জাগরণের উন্মেষ মুহূর্ত। শোষকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, কূপমন্ডূকতা ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে উদার মানসিকতার এবং খন্ডিত অধিকারের বিরুদ্ধে সামগ্রিক অধিকার প্রকাশে স্মারক হলো অমর একুশে।
একুশে ফেব্রুয়ারির সাথে অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে লাখো শহীদের নাম, যাদের স্মৃতি ভাস্কর এবং অন্তকালের পথপরিক্রমায় মৃত্যুহীন। একুশে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমস্ত কলুষতা থেকে মুক্ত রাখবো - এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।
সবশেষে কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ রচিত “স্মৃতিস্তম্ভ” কবিতার কয়েকটি স্তবক আবৃত্তি করছি -
স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার?
ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো!
যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
- ধন্যবাদ সবাইকে।
২। ২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
একুশ আমার পলাশ শিমুল
কৃষ্ণচূড়ার ফুল
একুশ আমার শহীদ ভাইয়ের
রক্ত নদীর কূল।
একুশ আমার বেচেঁ থাকার পল্লবিত আশা।
অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সম্মানিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে আসসালামু আলাইকুম। উপস্থিত সকলকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। গভীর শদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সকল বীর ভাষা শহিদদের, যাদের আত্নত্যাগের কারনে বাংলা ভাষা বিশ্বময় মর্যাদার আসনে আধিষ্টিত হয়েছে।
আজ এমন একটি দিন যে, দিনটি না আসলে আমরা কখনোই মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারতাম না, পেতাম না একুশের চেতনায় হাত ধরে লাল সবুজ পতাকা। পেতাম না স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট একদিনের তৈরি হয়নি, বাঙালী জাতির আত্ন-আন্বেষনের ও অধিকার আদায়ের সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ এই অমর একুশ।
যার ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন সংলগ্ন আমতলায় ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়েছি। নরুর আমিন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভাঙ্গের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। ছাত্র সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে।
মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা আবমাননার অজুহাতে আন্দোলন কারীদের উপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত-সহ আরও অনেকে। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি যদি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারেরা মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ ত্যাগ না করতো তাহলে কোনোদিনই আমরা রাষ্ট্র ভাষা বাংলা পেতাম না। সেই আন্দোলন কেবল ভাষার জন্যই ছিলো না, সে আন্দোলন ছিলো পাকিস্তানী শাসন-শোষকের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে বাঙ্গালির দৃঢ় প্রতিবাদ। বিভিন্নভাবে পশ্চিম পাকিস্তানর শাসকেরা বাঙ্গালিকে দমন-পীড়ন করার চেষ্টা চালিয়ে ছিলো।
একুশে ফেব্রুয়ারিই যেন বাঙালির অঘোষিত স্বাধীনতা দিবস। শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিনতা ও মাথা উচু করে বাচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরনা একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে আত্নত্যাগের মন্ত্র, বাঙ্গালিকে করেছে মহীয়ান। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে বহু আকাঙ্কিত স্বাধীনতার চেতনা। যে চেতনার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ধন্যবাদ সবাইকে।
৩। একুশে ফেব্রুয়ারির বক্তব্য
আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই সম্মানিত সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ ও মঞ্চের সম্মুখে উপবিষ্ট সুধী জন সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ফুল পাখি নই, নইকো পাহাড়
ঝরনা মুখের মধুর ভাষায়
মনের কথা কই ।
বাংলা আমার ময়ের ভাষা
শহিদ ছেলের দান
আমরা ভাইয়ের রক্তে লেখা
ফেব্রুয়ারির গান।
আজ এমন একটি দিন যে দিনটি না আসলে আমরা কখনোই মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। পেতাম না একুশের চেতনার হাত ধরে লাল সবৃজ পতাকা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ।
মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট একদিনে তৈরি হয়নি, বাঙ্গালি জাতির আত্ম-অন্বেষণের ও অধিকার আদায়ের সচেতনতা বহিঃপ্রকাশ এই অমর একুশ। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নরুল আমীন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তারা । ছাত্রসভার সিন্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙলো।
সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হয়েছিলো। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি যদি সালাম বরকত রফিক জব্বারেরা মায়ের ভাষার দাবিতে প্রাণ না দিতো তাহলে কখনোই আমরা রাষ্ট্র ভাষা বাংলা পেতাম না। সেই আন্দোলন কেবল ভাষার জন্যই ছিলো না সে আন্দোলন ছিলো পাকিস্তানী শাসন-শোষণের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে বাঙ্গালির দৃঢ় প্রতিবাদ । বিভিন্নভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা বাঙ্গালিকে বাঙ্গালির সচেনতা ও প্রতিবাদী দুর্বার আন্দোলনে তারা বারবার পিছু হটতে বাধ্য হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই তাই মাথা নত না করার এমন এক রক্তাক্ত ইতিহাস যার হাত ধরে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা । একুশে ফেব্রুয়ারিই যেন বাঙ্গালির অঘোষিত স্বাধীনতা দিবস। শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণ একুশে ফেব্রুয়ারি ৷
১৯৫২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি যেন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রক্ত দিয়ে মাতৃভাষাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল, আজ তা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসভ্ঘের সদস্যদেশসমুহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ।
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান । মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে বহু আকাঙতি স্বাধীনতার চেতনা। যে চেতনার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ আগামীর দিকে। ধন্যবাদ সবাইকে।